সঞ্চয়পত্র কী
বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উৎসাহিত করা ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয় স্কীমের মাধ্যমে আহরণ করার উদ্দেশ্যে এবং সাধারণের নির্ঝঞ্ঝাট অর্থ বিনিয়োগের পথ প্রশস্থ করার অন্য নাম সঞ্চয়পত্র।
বর্তমানে কয় ধরণের সঞ্চয়পত্র চালু আছে ? মুনাফার হার কত ?
সঞ্চয়পত্রের নাম | মেয়াদকাল | মুনাফার হার | মুনাফা প্রদানের পদ্ধতি |
(ক) পরিবার সঞ্চয় পত্র | ৫ – বছর | ১১.৫২% | মাসিক |
(খ) তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র | ৩ – বছর | ১১.০৪ % | ত্রৈমাসিক |
(গ) ৫বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র | ৫ – বছর | ১১.২৮ % | মেয়াদ পূর্তি |
(ঘ) পেনশনার সঞ্চয়পত্র | ৫ – বছর | ১১.৭৬ % | ত্রৈমাসিক |
কীভাবে সঞ্চয়পত্রের উপর কর কর্তন করা হয়?
মোট বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকা বা তার কম হলে ৫% হারে এবং মোট বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে সব টাকার উপরে ১০% হারে মুনাফা হতে উৎসে কর কর্তন করা হয়।
পেনশন সঞ্চয়পত্র
পেনশন সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকা বা তার কম হলে তা আয়কর মুক্ত । কিন্তু মোট বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে সব টাকার উপর ১০% হারে মুনাফা হতে উৎসে কর কর্তন করা হয়।
সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে করণীয়
যে অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, সেই বছরে নির্দিষ্ট হারে আয়করের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়া যায়। তবে সঞ্চয়পত্র কেনার সংশ্লিষ্ট বছরেই কেবল আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে, একই সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে পরবর্তী কোনো বছর এই রেয়াত সুবিধা পাওয়া যাবে না। অর্থ আইন ২০২৩-এর ষষ্ঠ তফসিলের ন্যায় ৭ অনুযায়ী, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে।
সঞ্চয়পত্র থেকে যে সুদ পাওয়া যায় এবং যে পরিমাণ টাকা উৎসে আয়কর হিসেবে কেটে রাখা হয়, সেটাই চূড়ান্ত কর দায়। যেমন মনে করি জনাব জাফর সঞ্চয়পত্র থেকে ৫ লাখ টাকা সুদ পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ উৎসে আয়কর হিসেবে ২৫ হাজার টাকা কেটে রেখে জাফর সাহেব ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। সুতরাং ৫ লাখ টাকা আয়ের ওপর ২৫ হাজার টাকার অতিরিক্ত আর কোনো আয়কর দিতে হবে না।
সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের সঙ্গে কিছু নথি জমা দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ফটোকপি বা প্রমাণপত্র (সার্টিফিকেট) এবং সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর, প্রাপ্ত সুদ ও উৎসে আয়কর কেটে রাখার প্রমাণপত্র। সঞ্চয়পত্রের ‘সুদ’ আয়কর রিটার্নে আর্থিক পরিসম্পদ থেকে আয়ের কলামে দেখাতে হবে। আর সম্পদ বিবরণীতে ইনভেস্টমেন্ট কলামে সঞ্চয়পত্রের ক্রয়মূল্য দেখাতে হবে।
আয়কর রিটার্নে কীভাবে দেখাবেন সঞ্চয়পত্রের সুদ
সঞ্চয়পত্রের সুদ করযোগ্য আয়। সুতরাং, আয়কর রিটার্নে এটি করমুক্ত আয় ঘরে দেখানো যাবে না। যদিও সঞ্চয়পত্রের সুদ গ্রাহককে দেওয়ার আগেই তা থেকে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখে।
আয়কর রিটার্নে সঞ্চয়পত্রের সুদকে আয় হিসেবে দেখানোর পাশাপাশি তা থেকে যে উৎসে কর কাটা হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে। তবে এই আয়ের ওপর নতুন করে কোনো কর দিতে হবে না।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক,
একজন ব্যক্তির ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তার ব্যবসা থেকে আয় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে আয় এক লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা। সুদের আয় থেকে উৎসে কর বাবদ ১১ হাজার ৪০ টাকা কাটা হয়েছে। এই করদাতার মোট আয় (৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা + ১ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা) ৬ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা।
তবে নতুন আইন অনুযায়ী এই করদাতার আয়কর ধরা হবে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাবদ আয় ১ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকার আয়কর দেওয়া লাগবে না।
তাহলে আলোচ্য অর্থবছরে ওই দোকানির আয়কর দিতে হবে ১৫ হাজার টাকা।
তার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাবদ আয় থাকায় রিটার্নের সঙ্গে তাকে সঞ্চয়পত্রের আয়কর কর্তনের সনদ ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে। পাশাপাশি রিটার্ন ফরমে আয়ের ঘরে সঞ্চয়পত্রের সুদ আয় বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা ও উৎসে কর কর্তনের ঘরে ১১ হাজার ৪০ টাকা লিখতে হবে।
আপনি যদি নিজের আয়কর নিজে জমা দিতে উৎসহী হন , তাহলে ভর্তি হতে পারেন আমাদের আয়কর রিটার্ন কোর্সে। এছাড়াও আয়কর সংক্রান্ত পরামর্শ বা সার্ভিস পেতে যোগাযোগ করুন আমাদের 01576576189 (WhatsApp) নাম্বারে। এছাড়াও , ফলোও করতে পারেন আমাদের YouTube , Facebook , twitter এবং Instagram এবং LinkedIn এ।