২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ সরকার নতুন আয়কর আইন প্রণয়ন করেছে। এটি দেশের কর ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই আইনটি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও নিয়ে এসেছে। নিচে এ আইনটির সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:
সুবিধাসমূহ:
- করমুক্ত সীমা বৃদ্ধির সুবিধা: সাধারণ মানুষের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর ফলে তারা কম ট্যাক্স দিতে হবে। এটি ব্যক্তিদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
- ব্যবসায়িক বিনিয়োগে ছাড়: নতুন কর আইনে বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে কর রেয়াত ও ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে কিছু বিশেষ কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে দেশীয় শিল্প ও ব্যবসা উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
- ডিজিটাল সিস্টেমের প্রচলন: কর সংগ্রহে স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা আনার জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। ই-ফাইলিং ও ই-ট্যাক্স পেমেন্ট সিস্টেমে আরও উন্নতি আনা হয়েছে, যা কর প্রদান প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে। করদাতারা এখন অনলাইনের মাধ্যমে তাদের কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন, ফলে ভোগান্তি কমেছে।
- মধ্যম ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ ছাড়: মধ্যম পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের জন্য করের হার কিছুটা হ্রাস করা হয়েছে। এটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় সুবিধা, কারণ এই শ্রেণির ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত করের চাপ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
- প্রযুক্তি নির্ভর আয়: প্রযুক্তি ও আইটি খাতের আয় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হয়েছে, যা এই খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে। স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি খাতের জন্য এই সুবিধাটি বড় সুযোগ হিসেবে কাজ করবে।
অসুবিধাসমূহ:
- উৎসে কর সংগ্রহের জটিলতা: উৎসে কর কর্তনের নিয়ম কঠোর করা হয়েছে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জটিলতা তৈরি করছে। ব্যবসায়িক লেনদেন ও পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের নিয়ম কার্যকর হলেও অনেক ব্যবসায়ী এটি জটিল এবং ব্যয়বহুল হিসেবে বিবেচনা করছেন।
- বাড়তি করহার: কিছু ক্ষেত্রে করের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে, বিশেষ করে উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য। এ ধরনের করহার বৃদ্ধি দেশের উচ্চ আয়ের ব্যবসায়ী ও পেশাদারদের জন্য অতিরিক্ত করের বোঝা তৈরি করতে পারে, যা তাদের আয় সংরক্ষণে সমস্যা সৃষ্টি করবে।
- মাঝারি আয়ের ব্যক্তিদের জন্য চাপ: মাঝারি আয়ের ব্যক্তিদের করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি করা হলেও, তাদের ওপর করের হার খুব বেশি কমানো হয়নি। এটি একটি শ্রেণিকে বাড়তি চাপের মধ্যে ফেলতে পারে। তারা একদিকে কর প্রদান করবেন, অন্যদিকে জীবনের প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন।
- অপ্রতিষ্ঠিত খাতের চ্যালেঞ্জ: নতুন কর আইনের আওতায় অনানুষ্ঠানিক খাতেও কর সংগ্রহের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ খাতের কর্মীদের আয় কম হওয়ায় তাদের জন্য কর প্রদান করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এটি অপ্রতিষ্ঠিত খাতের মানুষদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের নতুন আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫ অর্থনৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে করদাতাদের জন্য কিছু সুবিধা থাকলেও, উচ্চ আয় ও উৎসে করের ক্ষেত্রে কঠোরতার কারণে কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নতুন আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রদানে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে, এটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।